কার্যত ১৯২২ সালের জন্মলগ্ন থেকেই আনন্দবাজার পত্রিকা তার দীর্ঘ ইতিহাসে কেবল বাংলা ভাষায় সংবাদ পরিবেশনায় এবং বিশ্লেষণে অগ্রণীর ভূমিকা পালন করেনি, বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতির ভুবনে তার ভূমিকা এবং গুরুত্ব সর্বজনস্বীকৃত। এই ভূমিকা বহুমাত্রিক; প্রকাশনা, পৃষ্ঠপোষণা, সমালোচনা—বিভিন্ন দিক থেকে আনন্দবাজার পত্রিকা সাহিত্য সংস্কৃতির প্রসারে এবং উৎকর্ষ বিধানে সক্রিয় থেকেছে। সেই ভূমিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ছোটগল্প প্রকাশ।
প্রথম যুগ থেকেই এই পত্রিকায় প্রথম সারির ছোটগল্পকারদের সৃষ্টি নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে, পাশাপাশি সানন্দে বরণ করে নেওয়া হয়েছে সম্ভাবনাময় নতুন স্রষ্টাদের। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে কার্যত সমস্ত অগ্রণী সাহিত্যিকের ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকার পাতায়; শরৎচন্দ্র ব্যতিক্রম, তবে বিরল ব্যতিক্রম। কেবল শারদীয়া বা অন্যান্য বিশেষ সংখ্যাতেই নয়, দশকের পর দশক আনন্দবাজার পত্রিকায় সারা বছর নিয়মিত ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে রবিবাসরীয় বিভাগে।
রবিবার কেবল অবকাশযাপনের দিন নয়, ব্যস্ত কর্মজীবনের প্রাত্যহিকতা থেকে মানসিক মুক্তিরও দিন। আর, সংস্কৃতিমনস্ক, রুচিমান বাঙালির মুক্ত মন বরাবরই তার খোরাক খুঁজেছে সৃষ্টির ভুবনে। রবিবাসরীয় আনন্দবাজার বাঙালি মনের সেই দাবি মেটাতে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে যত্নবান। ছোটগল্পের নিয়মিত প্রকাশনাও সেই তাগিদ থেকেই।দৈনিক সংবাদপত্র দ্রুত অতীত হয়ে যায়, কিন্তু সেখানে প্রকাশিত অন্যান্য নানা সৃষ্টির মতোই, ছোটগল্প অতীত হয় না, এমনকী যুগ বদলে গেলেও তার আকর্ষণ ফুরিয়ে যায় না, পুরনো কালের গল্পকে নতুন কালের পাঠক নতুন মন নিয়ে পড়েন, তার নতুন অর্থ খুঁজে পান। তাই পুরনো গল্প নতুন করে পরিবেশনের একটা গুরুত্ব থেকেই যায়।
ইতিপূর্বে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত গল্পের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল ‘আনন্দসঙ্গী’ নামে। এ বার আনন্দসঙ্গী-র নতুন ধারায় প্রথম প্রকাশনা হিসেবে সংকলিত হল রবিবারের গল্প। প্রকাশনার সময়ের বিচারে ১৯৩৯ থেকে ২০০৪, গল্পকারের বয়ঃক্রমের হিসাবে বনফুল থেকে আবুল বাশার—নানা দিক থেকেই বাংলা ছোটগল্পের বিবর্তনের একটি মূল্যবান দলিল এই সংকলন। তসলিমা নাসরিন যেমন বলেছেন, ‘আনন্দবাজার পত্রিকায় ছাপা হওয়া গল্প থেকে বাছাই করা কিছু গল্প নিয়ে এই সংকলনটি, উনিশশো উনচল্লিশ সাল থেকে দু’হাজার চার পর্যন্ত প্রায় ছ’যুগ দীর্ঘ একটি জীবনের সময়।
অল্প কিছু গল্প কিন্তু একই সঙ্গে এটি একটি সময়ের দলিল। কী করে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে দেখার চোখ, সেটিই দেখার।’ ফলে, এই বইয়ের আয়নায় ধরা দিয়েছে পাল্টানো সময়পটে মানুষের মনের বিচিত্র আলো-আঁধারি। ফলে স্থান, কাল আর পাত্রপাত্রী মিলিয়ে এই গল্পের বই এক অনন্য সম্ভার। ছোট ছোট গল্পে জীবনের বৃহৎ উদ্ভাস।